ভেক্টর রাশিঃ
ভেক্টর সম্পর্কে কম-বেশি আগেও হয়তো পড়েছো। খুব সহজ ভাষায় ভেক্টর হচ্ছে এমন একটি রাশি যার দৈর্ঘ্য (অথবা মান) এবং একটি তলে নির্দিষ্ট দিক রয়েছে। মনেকরো তুমি একটা স্পেসশীপে চেপে পৃথিবী থেকে রওনা দিয়ে ৫৫ মিলিয়ন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছালে। এখানে তুমি জানো স্পেসশীপটা কোন দিকে গিয়েছে আর কতদূর পাড়ি দিয়েছে; এটি একটি ভেক্টরের উদাহরণ । পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় একে সরণ বলা হয়। সরণ ভেক্টরের সবচেয়ে সহজ উদাহরণগুলির একটি। এছাড়া বেগ, ত্বরণ, ভরবেগ এগুলিও ভেক্টরের উদাহরণ।
ছবিঃ ১ |
যদি কোন ভৌত রাশির নির্দিষ্ট দিক এবং সুনির্দিষ্ট মান থাকে তাদেরকে ভেক্টর বলা হয়।
স্কেলার রাশিঃ
যদি তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে, তুমি যে বিল্ডিং এ থাকো সেটা কয়তলা? অথবা তোমার বাসা থেকে তোমার বন্ধুর বাসা কতটা দূরে? এবং সেখানে যেতে কতক্ষন সময় লাগবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে উচ্চতা, দূরত্ব অথবা সময়ের শুধু মান জানলেই চলছে; এক্ষেত্রে কোন দিক জানার প্রয়োজন নাই। একইভাবে তাপমাত্রা, কোন কিছুর আয়তন বা পরিমাণ বলতে গেলেও দিকের প্রয়োজন পড়েনা। এগুলো হচ্ছে স্কেলার রাশির উদাহরণ।
ছবিঃ ২ |
যেসব ভৌত রাশিকে সুনির্দিষ্ট মানের সাহায্যেই প্রকাশ করা যায়, দিকের প্রয়োজন হয় না তাদেরকে স্কেলার বলা হয়।
ভেক্টর রাশির প্রকাশঃ
ছবির মাধ্যমে ভেক্টর প্রকাশ করতে তলের উপর নির্দিষ্ট দিকে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের তীর চিহ্ন একে বোঝানো হয়ে থাকে। লেখার সময় ভেক্টর রাশির উপর একটি তীরচিহ্ন একে সেটাকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে (যেমনঃ ), কিছু কিছু বইয়ে অক্ষরটি বোল্ড (যেমনঃ ) অথবা অক্ষরের নিচে দাগ দিয়েও (যেমনঃ ) ভেক্টরকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ভেক্টরের দৈর্ঘ্য বা মান প্রকাশ করার জন্য পরমমান চিহ্নের সাহায্যে (যেমনঃ বা ) অথবা বোল্ড না করে (যেমনঃ ) প্রকাশ করা হয়।
ছবিঃ৩ |
একটা ভেক্টরকে যেকোন বাস্তব সংখ্যা (অর্থাৎ স্কেলার রাশি) দিয়ে গুণ করতে পারো। যদি সংখ্যাটি ধনাত্মক হয় তাহলে সেটি ভেক্টরের দৈর্ঘ্য ততগুণ বাড়বে। যদি সংখ্যাটি ঋণাত্মক হয়, তাহলে সেটি ভেক্টরের দিককেও ঘুড়িয়ে দিবে। যেমনঃ কে দিয়ে গুণ করলে ফলাফল হিসাবে ভেক্টরটি পাবে যার দৈর্ঘ্য এর দ্বিগুণ আবার যদি দিয়ে গুণ করো, তাহলে দৈর্ঘ্য একই থাকলেও দিক পুরোপুরি উল্টো দিকে। লক্ষ্য করো, ভেক্টরের মান এবং দিক নির্দিষ্ট হলেও অবস্থান নির্দিষ্ট হতেও পারে নাও পারে।
ভেক্টর রাশির ধরনঃ
ইউনিট ভেক্টরঃ কোন ভেক্টরের মান এক হলে তাদেরকে ইউনিট (unit) ভেক্টর বলে। এদের মাথার উপরে একটা Hat দিয়ে নির্দেশ করা হয়; যেমনঃ একটি একক ভেক্টর। কারন এর মান হিসাব করলে পাবে-
অর্থাৎ ইউনিট ভেক্টরের প্রত্যেকটি উপাদানকে একক হতেই হবে এমনটি নয়; যদি তার মান একক হয়, তাহলেই সেটিকে ইউনিট ভেক্টর বলা যাবে।
নরমাল ভেক্টরঃ কোন তলের নির্দিষ্ট একটি বিন্দুতে লম্ব ভেক্টরকে (অর্থাৎ যে ভেক্টর তলের সাথে কোণ তৈরি করে) নরমাল ভেক্টর বলে। নরমাল ভেক্টরকে সাধারনত দিয়ে নির্দেশ করা হয়। আর নরমাল ভেক্টরকে তার মান দিয়ে ভাগ করে (অর্থাৎ নরমালাইজড করে) যে ভেক্টর পাবে তাকে ইউনিট নরমাল ভেক্টর বলা হয়। ইউনিট নরমাল ভেক্টরকে অনেকসময় দিয়েও নির্দেশ করা হয়ে থাকে।
নাল ভেক্টরঃ যেসব ভেক্টরের মান শূন্য তাদেরকে null ভেক্টর বলা হয়। এদেরকে দিয়ে নির্দেশ করা হয়।
পজিশন ভেক্টরঃ একটি বস্তু মূলবিন্দু থেকে কতটুকু দূরত্ব আছে সেটা যে ভেক্টরের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়, তাকে পজিশন ভেক্টর বলে। যেমনঃ ত্রিমাত্রিক কো-অর্ডিনেট সিস্টেমে কোন বস্তুর অবস্থান ভেক্টর তার কো-অর্ডিনেটের মানের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় এভাবে-
ভেক্টর আর স্কেলারের সংজ্ঞা শুধু মাত্র মান আর দিকের মাধ্যমে দিলে প্রকৃত অর্থটা ঢাকা পরে যায়। ভেক্টরের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে ভেক্টরস্পেস বুঝতে হবে। পরবর্তী পরিচ্ছেদে ভেক্টরস্পেস সম্পর্কে আলোচনা করবো।