আগের পরিচ্ছেদটা পড়ে অনেকেই হয়তো ভাবছো ভেক্টর মানে একটি তীরচিহ্ন ছাড়া কিছুই নয়, আশা করি এই পরিচ্ছদের শেষে তাদের ভুল ধারণাটি ভেঙে যাবে।
ভেক্টরস্পেসঃ
মনেকরো স্পেসশীপটা যে বিন্দু থেকে যাত্রাশুরু করেছে সেটিকে মূলবিন্দু ধরে একটি দ্বিমাত্রিক কার্তেসিয়ান কো-অর্ডিনেট সিস্টেম কল্পনা করলে। এবার মূলবিন্দু থেকে স্পেসশীপটার অবস্থান পর্যন্ত একটা লম্বা করে ভেক্টর আঁকলে। এটিহবে একটি দ্বিমাত্রিক অবস্থান ভেক্টর।
ছবিঃ ১ |
দ্বিমাত্রিক তলের এই অবস্থান ভেক্টরটিকে তুমি চাইলে দুইটি রাশি ( কো-অর্ডিনেট আর কো-অর্ডিনেট) এর সাহায্যে প্রকাশ করতে পারো।
আবার ধরো স্পেসশীপটা চালাতে চালাতে কখনো ডানে মোড় নিলে, কখনো বা বামে মোড় নিলে, কখনো উপরের দিকে চালালে আবার একটু পর হয়তো নিচের দিকে খানিকটা নামলে (স্পেসে ডান-বাম বা উপর-নিচের ধারণা আপেক্ষিক), তুমি চাইলে এই সবগুলো অবস্থানকেই আলাদা আলাদা অবস্থান ভেক্টর দিয়ে নির্দেশ করতে পারবে। দ্বিমাত্রিক তলের এরকম সকল ভেক্টরকে একসাথে বলা যায় দ্বিমাত্রিক ভেক্টরস্পেস।
একইভাবে যদি ত্রিমাত্রিক কো-অর্ডিনেট সিস্টেমে স্পেসশীপটার অবস্থানকে ভেক্টরের সাহায্যে প্রকাশ করতে চাও, তাহলে তোমার দরকার তিনটি রাশি ( কো-অর্ডিনেট, কো-অর্ডিনেট আর কো-অর্ডিনেট)।
ছবিঃ ২ |
এবং এক্ষেত্রে ভেক্টরটি হচ্ছে-
ত্রিমাত্রিক তলের এরকম সকল ভেক্টরকে তাহলে একসাথে বলতে পারবে ত্রিমাত্রিক ভেক্টরস্পেস।
তোমরা দেখতে পাচ্ছো যে, দ্বিমাত্রিক ভেক্টরস্পেসের জন্য লাগছে দুটি রাশি, ত্রিমাত্রিক ভেক্টরস্পেসের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে তিনটি রাশির। এই ধারনার উপর ভিত্তি করে তাহলে বলতে পারো দশ মাত্রার ভেক্টরস্পেসের জন্য লাগবে দশটি রাশি, অর্থাৎ -
সুতরাং -মাত্রার ভেক্টরস্পেসে কোন ভেক্টরকে প্রকাশ করতে হলে -সংখ্যক রাশি প্রয়োজন হবে।
এখানে একটা জিনিস বলে রাখি, অবস্থান ভেক্টরের কো-অর্ডিনেটগুলোকে যে পাশাপাশি সাজিয়ে (row vector) লিখতে হবে এমনটি নয়, এদেরকে এভাবে উপর থেকে নিচেও (column vector) লিখতে পারো-
এভাবে টি কো-অর্ডিনেটের ভেক্টরস্পেসকে আমরা -ভেক্টরস্পেস বলে থাকি। আর এর উপদানগুলো হচ্ছে ভেক্টর।
.একটি ভেক্টরস্পেস হচ্ছে একটি সেট। আর সেই সেটের উপদানগুলোকে ভেক্টর বলা হয়।
তোমরা জানো যে একটি ভেক্টরকে বাস্তব সংখ্যা দিয়ে গুণ করে তার দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করা যায়। -স্পেসে তুমি চাইলে সবগুলো কো-অর্ডিনেটকে একটি বাস্তব সংখ্যা দিয়ে গুণ করে তাদের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন করতে পারো, এখানে ।
যে বাস্তব সংখ্যা দিয়ে ভেক্টরস্পেসকে গুণ করলে সেটিকে বলা হয় স্কেলার। এই স্কেলারগুলো ভেক্টরস্পেসে বাড়তি বৈশিষ্ট্য ও অবয়ব যোগ করে। স্কেলারকে যে সবসময় বাস্তব সংখ্যাই হতে হবে এমন কোন কথা নেই অবশ্য, স্কেলার জটিল সংখ্যাও হতে পারে।
যে বাস্তব সংখ্যা বা কোন উপাদান দিয়ে ভেক্টরস্পেসকে গুণ করার মাধ্যমে ভেক্টরস্পেসের উপদানগুলোর বাড়তি বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয় তাকে স্কেলার বলে।
এই পরিচ্ছেদটি পড়ার পর তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এতদিন ধরে শিখে এসেছি ভেক্টরকে মান এবং দিকযুক্ত একটি তীরচিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা যায়; অথচ এই পরিচ্ছেদে ভেক্টরকে বলা হচ্ছে একটি সেটের উপাদান! তীরচিহ্নের সাথে সেটের উপাদানের কিভাবে সম্পর্ক থাকতে পারে?
এটা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি। মনেকরো একটা ভেক্টরস্পেস
এখন কো-অর্ডিনেটের বিন্দু থেকে বিন্দু পর্যন্ত একটা তীরচিহ্ন আঁকো। এই তীরচিহ্নটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে , আর এটি থেকে বিন্দুর দিক বরারবর একটি ভেক্টর নির্দেশ করছে (ছবিঃ ৩)। অর্থাৎ এটি আসলে ভেক্টরস্পেসকে ছবিতে উপস্থাপন করার একটি উপায়মাত্র।
ছবিঃ ৩ |
একইভাবে একটি তীরচিহ্ন যা কোন ভেক্টরকে নির্দেশ করে সেটির কো-অর্ডিনেটগুলো নিয়ে একটি সেট তৈরি করলে সেটি হবে ওই ভেক্টরস্পেসের গাণিতিক প্রকাশ। দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক কো-অর্ডিনেটে সহজেই ভেক্টরকে নির্দিষ্ট মানের তীরচিহ্ন একে দেখানো যায়। কিন্তু বহুমাত্রিক ভেক্টরস্পেসকে এতো সহজে তীরচিহ্ন এঁকে প্রকাশ করা সম্ভব হয়না।
ভেক্টর রাশির দৈর্ঘ্যঃ
আগের পরিচ্ছেদে বলেছিলাম একটি ভেক্টর এর দৈর্ঘ্য সাধারণত পরমমান ব্যবহার করে (যেমনঃ |v| বা ) অথবা বোল্ড না করে (যেমনঃ v) প্রকাশ করা হয়। কিন্তু দৈর্ঘ্য কিভাবে নির্ণয় করবে সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করিনি। ভেক্টরস্পেস সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার পর আশা করি
বীজগণিতে যেভাবে একাধিক ভ্যারিয়েবলকে যোগবিয়োগ করেছো, সেভাবে ভেক্টরস্পেসের উপাদানগুলোকেও যোগ বা গুণ করতে পারো; তবে যোগফলকে ওই ভেক্টরস্পেসের একটি উপাদান হতে হবে। আবার ভেক্টরস্পেসের উপাদানগুলোকে যদি স্কেলার দিয়ে গুণ করো, সেই গুণফলটিকেও ওই ভেক্টরস্পেসের একটি উপাদান হতে হবে। গাণিতিক ভাষায় একে closure property বলা হয়।
এছাড়া ভেক্টরস্পেসের ক্ষেত্রে এই গাণিতিক অপারেশনগুলো কিছু নিয়ম বা axiom মেনে চলে।
- ১. ভেক্টরের যোগ হবে associative; অর্থাৎ ভেক্টর এর জন্য
- ২. ভেক্টরস্পেস এর একটি উপাদান হলো , এটিকে null ভেক্টর বলা হয়ে থাকে এবং কোন ভেক্টর কে এই null ভেক্টরের সাথে যোগ করলে ভেক্টরটির কোন পরিবর্তন হয় না; অর্থাৎ
- ৩. ভেক্টরস্পেসের প্রত্যেকটি উপাদান এর একটি নেগেটিভ ভেক্টর রয়েছে যাদেরকে যোগ করলে ফলাফল হিসাবে একটি null ভেক্টর পাওয়া যায়; অর্থাৎ
- ৪. দুটি স্কেলার এর সাথে ভেক্টর কে গুণ করলে সেটি associative হবে; অর্থাৎ
- ৫. ভেক্টর ও স্কেলারের যোগ ও গুণন distributive; যেমন হলো স্কেলার আর হলে দুটি স্কেলার ও একটি ভেক্টরের জন্য-
এবং একটি স্কেলার ও দুটি ভেক্টরের জন্য
- ৬. ভেক্টরস্পেসে একটি একক উপাদান রয়েছে যাকে একক ভেক্টর বলা হয়। এবং একক ভেক্টরের সাথে অন্য ভেক্টরগুণ করলে ভেক্টরটির পরিবর্তন হবেনা; অর্থাৎ যেকোন ভেক্টর এর জন্য-
ভেক্টরস্পেসের অ্যালজেবরা নিয়ে পরের পরিচ্ছেদগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।