মনেকরো, তুমি বিন্দু হতে হাটতে হাটতে বিন্দুতে তোমার বন্ধুর বাড়িতে যেতে চাচ্ছো। তুমি চাইলে পথ ধরে যেতে পারো, পথ ধরেও যেতে পারো অথবা পথ ধরেও যেতে পারো।
ছবিঃ ১ |
কিন্তু তুমি যে পথ ধরেই যাওনা কেন, থেকে এর রৈখিক দূরত্ব কিন্তু বদলাবে না। ভেক্টর যোগের মূল বিষয়টা অনেকটা এরকম। দুই বা ততোধিক ভেক্টরকে যেভাবেই সাজাও না কেন, তাদের যোগফলের মান একই থাকবে। যদি দুটি ভেক্টর একে অন্যের সমান্তরাল হয়, তখন খুব সহজেই একটি ভেক্টরের পাদবিন্দুতে অন্যটির শীর্ষবিন্দু বসিয়ে ভেক্টরদুটির মান সরাসরি যোগ করে দিতে পারবে। কিন্তু সেটা সবক্ষেত্রে ভেক্টরগুলি একে অপরের সমান্তরাল নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে গ্রাফিকালভাবে ভেক্টরযোগের দুইটি পদ্ধতি রয়েছে- ১) ত্রিভুজ পদ্ধতি ২) সামান্তরিক পদ্ধতি ।
ত্রিভুজ পদ্ধতি
ধরো ও দুটি ভেক্টর; এবং তারা একে অপরের সমান্তরাল নয়। এদেরকে যোগ করার জন্য এর শীর্ষবিন্দুতে এর পাদবিন্দু নিয়ে এসে বসাও। তারপর এর পাদবিন্দু থেকে এর শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত একটি ভেক্টর আকো; মনেকরো এই ভেক্টরটার নাম ।
ছবিঃ ২ |
তাহলে ভেক্টরটি ও এর যোগফল নির্দেশ করবে, অর্থাৎ । এবং কে লব্ধি ভেক্টরResultant vector বলা হয়।
একের অধিক ভেক্টরের যোগফল যে ভেক্টরের সাহায্যে প্রকাশ করা হয় তাকে লব্ধি ভেক্টর বা Resultant ভেক্টর বলা হয়।
একই পদ্ধতি ব্যবহার করে দুইয়ের অধিক ভেক্টরের যোগফলও হিসাব করা যায়। মনেকরো তোমার কাছে ও ভেক্টর রয়েছে।
ছবিঃ ৩ |
এর শীর্ষবিন্দুতে এর পাদবিন্দু বসাও এবং এর পাদবিন্দু থেকে আরেকটি বাহু একে ত্রিভুজটি সম্পূর্ণ করো; তাহলে হবে ও এর লব্ধি ভেক্টর। অর্থাৎ ।
ছবিঃ ৪ |
এবার এর শীর্ষবিন্দুতে এর পাদবিন্দু বসাও এবং এর পাদবিন্দু থেকে এর শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত লব্ধি ভেক্টর একে ত্রিভুজটি সম্পূর্ণ করো। তাহলে অর্থাৎ ।
সবশেষে এর শীর্ষবিন্দুতে এর পাদবিন্দু বসিয়ে এর পাদবিন্দু থেকে এর শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত লব্দি ভেক্টর আকো, তাহলে ।
সুতরাং ভেক্টরযোগের ত্রিভুজ পদ্ধতি অনুসারে লিখতে পারো ।
একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে যে, এতগুলো আলাদা আলাদা ত্রিভুজ না একে সবগুলো ভেক্টরকে একে অপরের উপর বসিয়ে সরাসরি এর পাদবিন্দু থেকে আঁকলেও একই লব্ধি ভেক্টরই পেতে।
ভেক্টরযোগের সামান্তরিকসূত্র
ভেক্টর যোগ করার জন্য সবসময় যে ত্রিভুজই তৈরি করতে হবে ব্যাপারটা এরকম নয়। গ্রাফিকাল পদ্ধতিতে ভেক্টর যোগের আরেকটি উপায় হলো সামান্তরিক পদ্ধতি। এপদ্ধতিতে ভেক্টর যোগের জন্য ভেক্টর আর ভেক্টর এর পাদবিন্দু দুটি একবিন্দুতে বসাও। তারপর এর শীর্ষবিন্দু থেকে এর সমান্তরাল একটি রেখা আঁকো। একইভাবে এর শীর্ষবিন্দু থেকে এর সমান্তরাল আরেকটি রেখা আঁকো। এভাবে একটি সামান্তরিক তৈরি হলো। এই সামান্তরিকের কর্ণ ও এর লব্ধি প্রকাশ করবে।
ছবিঃ ৫ |
অর্থাৎ ।
যদি একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করো, তাহলে বুঝতে পারবে, ভেক্টরযোগের ত্রিভুজসূত্র আর সামান্তরিকসূত্রের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই, শুধুমাত্র প্রয়োগের পদ্ধতি একটু আলাদা।
ভেক্টর রাশির বিয়োগ
মনেকরো, থেকে বিয়োগ করবে। তাহলে সেটিকে লেখা যায়-
অর্থাৎ থেকে বিয়োগ করলে যে ফল পাবে এর সাথে যোগ করলেও একই ফল পাচ্ছো। ভেক্টররাশির বিয়োগটাও একই নিয়ম মেনে চলে। অর্থাৎ একটি ভেক্টর রাশির সাথে আরেকটি ঋণাত্মক ভেক্টর যোগ করলে লব্ধি ভেক্টর ওই দুটি ভেক্টররাশির বিয়োগফল নির্দেশ করে। এজন্য ভেক্টর রাশির বিয়োগ আসলে উপরে উল্লেখ করা ভেক্টর যোগের ত্রিভুজ অথবা সামান্তরিক সূত্রের মাধ্যমেই করা যায়। শুধুমাত্র যে ভেক্টরটি বিয়োগ করা হবে সেটির দিক উল্টে দিয়ে আগের মতই ত্রিভুজ অথবা সামান্তরিক পূর্ণ করে লব্ধি ভেক্টরের মান হিসাব করলেই সেটি ওই ভেক্টর রাশি দুটির বিয়োগফল নির্দেশ করবে।
ছবিঃ ৬ |
মনেকরো উপরের উদাহরণের থেকে ভেক্টরটি বিয়োগ করতে চাচ্ছো। তাহলে কে দিয়ে প্রতিস্থাপন করে ছবিঃ ৬ এর মতো করে ত্রিভুজ অথবা সামান্তরিক আকলে হবে আর এর বিয়োগফলের লব্ধি ভেক্টর।
উপাংশের সাহায্যে ভেক্টরের যোগ-বিয়োগ
দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক ভেক্টরের ক্ষেত্রে গ্রাফিকালভাবে ত্রিভুজ বা সামান্তরিক এঁকে ভেক্টরের যোগ-বিয়োগ সহজে করা গেলেও বহুমাত্রিক ভেক্টরের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়না। এক্ষেত্রে ভেক্টরগুলোর উপাংশের সাহায্যে যোগবিয়োগ করাটা সহজ হয়।এক্ষেত্রে ওই ভেক্টরগুলোর উপাংশগুলো একসাথে, উপাংশগুলো একসাথে আর উপাংশগুলো একসাথে যোগ করে Resultant ভেক্টর অংক কষে বের করে ফেলতে পারবে। আসো কয়েকটা উদাহরণ দেখি।
উপাংশের সাহায্যে যোগ
মনেকরো, এবং দ্বিমাত্রিক তলে দুটি Force কে নির্দেশ করছে। ধরো ছবিঃ ৭ এর প্রতিটি একক ঘর 1N প্রকাশ করে, তাহলে কে এভাবে আঁকতে পারো-
ছবিঃ ৭ |
এবং ভেক্টরের অক্ষ বরাবর উপাংশ হচ্ছে ও । তাহলে অক্ষ বরারব এর লব্ধি
একইভাবে অক্ষ বরাবর উপাংশ হচ্ছে ও । তাহলে অক্ষ বরারব এর লব্ধি
তাহলে লব্ধি ভেক্টরটি হবে-
আবার ভেক্টরের উপাংশ জানা থাকলে খুব সহজেই তার মান এবং দিক হিসাব করে ফেলতে পারবে। এক্ষেত্রে এর মান হচ্ছে-
আর এর দিক হচ্ছে-
ছবির মাধ্যমে কে প্রকাশ করতে পারো এভাবে-
ছবিঃ ৮ |
একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবে যে, ছবি একে ত্রিভুজ বা সামান্তরিক পদ্ধতি প্রয়োগ করলেও জন্য একই ফলাফল পাবে।
উপাংশের সাহায্যে বিয়োগ
যদি উপরে উল্লেখিত ভেক্টর এবং এর বিয়োগফল হিসাব করতে বলা হয়, তাহলে আগের মতই উপাংশগুলো আর উপাংশগুলো আলাদা আলাদা বিয়োগ করে Resultant ভেক্টরটি হিসাব করে ফেলা যাবে। অর্থাৎ-
সুতরাং বিয়োগফলের লব্ধি ভেক্টর
এক্ষেত্রে এর দৈর্ঘ্য ও দিক-
যদি ছবির সাহায্যে বিয়োগের লব্ধি ভেক্টরটিকে প্রকাশ করো, তাহলে সেটি দেখতে এরকম হবে-
ছবিঃ ৯ |
এবং আগেরমতই যদি ত্রিভুজ বা সামন্তরিক সূত্রের মাধ্যমে বিয়োগফলটিকে প্রকাশ করতে তাহলে একই ফলাফল পেতে।
ত্রিমাত্রিক কো-অর্ডিনেটে উপাংশের সাহায্যে যোগ-বিয়োগ
ত্রিমাত্রিক ভেক্টরের ক্ষেত্রেও উপাংশের সাহায্যে খুব সহজেই যোগবিয়োগ করা সম্ভব। মনেকরো দুটি ত্রিমাত্রিক ভেক্টর রয়েছে-
এক্ষেত্রে যোগ করার জন্য -
এবং লব্ধি ভেক্টরের মান-
বিয়োগ করার জন্য-
এক্ষেত্রে লব্ধি ভেক্টরের মান-
অনেক সময় ম্যাট্রিক্স এর বদলে বেসিস ভেক্টরের সাহায্যেও ভেক্টর রাশিকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমনঃ
তাহলে কে যোগ করার ক্ষেত্রে হবে-
বিয়োগ করার ক্ষেত্রে হবে-
অর্থাৎ দুটি ভেক্টরকে যোগ বা বিয়োগ করার জন্য তাদের অক্ষ বরাবর উপাংশগুলিকে যোগ বা বিয়োগ করতে হবে।
দুই ক্ষেত্রেই ভেক্টরগুলো এবং তাদের যোগ-বিয়োগের লব্ধি ভেক্টরের মান একই, শুধু লিখার পদ্ধতি ভিন্ন।