গড়বেগ
যেহেতু এখন বস্তুর সরণ সম্পর্কে একটু ধারণা পেয়ে গেছো, এবার তাহলে খুব সহজেই গড়বেগ বুঝতে পারবে। মহাকাশযানটি উড়ানোর সময়, সব সময় কি একই বেগে উড়ানো সম্ভব, তুমিই বলো? কখনও হয়তো গ্রহাণুপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় একটু সাবধানে চালিয়েছো, কখনও বা সুযোগ পেয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে গিয়েছো। সব সময়ে বস্তুর গতি একদম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মাপা যায় না, এজন্য আমরা অনেক সময়ে গড়বেগ হিসেব করি।
বস্তুর গড়বেগ সময়ের এবং ওইটুকু সময়ে সেটি কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করলো সেটার উপর নির্ভর করে। গড়বেগকে লেখা যায়-
এখানে হলো গড়বেগ এর একটি উপাংশ। এবং আশাকরি ইতোমধ্যে বুঝে গেছো, যদি পজিটিভ হয়ে গড়বেগও পজিটিভ হবে, নেগেটিভ হলে গড়বেগ নেগেটিভ এবং শূন্য হলে বস্তুর গড়বেগও শূন্য হবে।
তাৎক্ষণিক বেগ
কিন্তু যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করা হলো মহাকাশযানটি উড়তে শুরু করার ঠিক ৫ মিনিট পর তার গতিবেগ কত ছিলো? সেটাকি একই গতিতে উড়ছিলো, নাকি আস্তে আস্তে উড়ছিলো? এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেবার জন্য তাৎক্ষণিক বেগ কাকে বলে সেটা জানতে হবে। এরজন্য চলো প্রথমে একটা গ্রাফ একে ফেলি। গ্রাফটির অক্ষে বসাবো দৌড়বিদ ছেলেটির অবস্থানের ফাংশন এবং অক্ষে বসাবো সময় ।
ধরে নেই যখন সময় তখন তুমি মহাকাশযানটি স্টার্ট দিলে। এবং সময়ের সাথে সাথে সে যেটুকু দূরত্ব অতিক্রম করলে সেটা বিন্দু বসিয়ে বসিয়ে একে ফেললাম। এবার ৫ মিনিট পর তোমার গতি কতটুকু সেটা বের করার জন্য বিন্দুতে একটা লম্ব একে ফেললাম। একই সাথে অক্ষ থেকেও আরেকটা লম্ব একে ফেললাম, এটি ৫ মিনিট পর তোমার অবস্থান ফাংশন বোঝাবে। এবার মিনিট পর বিন্দুতে আরেকটি লম্ব একে ফেললাম, তাহলে অক্ষ বরাবর এর উপাংশ অবস্থানের ফাংশন বোঝাবে।
এখন একটা মজার জিনিস দেখো, যদি এই দুইটি সময়ের মধ্যেকার গড়বেগ হিসেব করতে চাই তাহলে আমরা পাচ্ছি অর্থাৎ y-অক্ষের মানকে x-অক্ষ দিয়ে ভাগ করে () আমরা গড়বেগটা বের করে ফেলছি। কিন্তু জ্যামিতির সূত্র থেকে তোমরা জানো যে, বক্রতলের ঢাল হচ্ছে । তারমানে গড়বেগ ( ) বক্রতলের উপর আকা লাইনের ঢাল ছাড়া কিছু নয়। দেখলে তো গণিত বইয়ের জ্যামিতি আসলে বাস্তব জীবনেও কিভাবে হিসেবের কাজে লাগানো যায়?
আচ্ছা, এখন মনেকরো, মিনিট না ধরে সময়টাকে আরেকটু কমালাম, অর্থাৎ জিজ্ঞেস করলাম মিনিটে তোমার বেগ কতো ছিলো? তারপর মিনিটে তাঁর বেগ কত ছিলো? এভাবে কমাতে কমাতে এর মান শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে থাকলাম। এই জিনিসটাকে ক্যালকুলাসের লিমিটের মাধ্যমে লিখে ফেলা যায়-
ছবিতে লক্ষ্য করলে দেখবে এর মান পরিবর্তন করার সাথে সাথে ঢালের মানও কমতে শুরু করেছে। এভাবে কমতে কমতে একসময়ে এই ঢালটি মিনিটে আকা স্পর্শকের ঢালের সমান হয়ে যাবে।অর্থাৎ ঠিক মিনিট সময়ে মহাকাশযানটির গতি ঠিক কতটুকু ছিলো সেটি আমরা পেয়ে যাবো। গাণিতিকভাবে লিমিটের সাহায্যে লিখতে পারবে
আর এই ই হলো মিনিট সময় পর তোমার মহাকাশযানের তাৎক্ষণিক বেগ। আরেকটু সহজ করে এই সম্পর্কটিকে লিখতে পারবে-
কিন্তু বারবার এই limit টা লেখা একটু ঝামেলা। এজন্য গণিতবীদরা বুদ্ধি খাটিয়ে সহজে এটিকে ডিফারেন্সিয়েশন ব্যবহার করে ( দিয়ে) লিখে থাকেন এভাবে-
অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন গতিশীল বস্তুর অবস্থানকে সময়ের সাপেক্ষে ডিফারেন্সিয়েশন করলে তাঁর তাৎক্ষণিক বেগ পাবে।